বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। প্রাচীন যুগ, লৌহ যুগ পাড়ি দিয়ে আদম
সন্তান এখন যান্ত্রিক যুগে বাস করছে। মূলত এই যান্ত্রিক যুগের সূচনা বিগত
শতাব্দীর আশির দশকে। ৩০ বছরে পৃথিবীর যে রূপ বৈচিত্র্য লাভ করেছে, তা ৩০০
বছরেও সম্ভব হয়নি। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে জ্ঞানবিজ্ঞান আবিষ্কার অর্জনের মধ্য
দিয়ে। পৃথিবীর এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিপ্লবী ভূমিকা রাখছে সারাবিশ্বের
তরুণসমাজ। পৃথিবী তারুণ্যের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে
এবং সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের তরুণরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন
ফেসবুক-ইন্টারনেটে। কী করছেন ফেসবুকে বাংলাদেশের তরুণরা? জ্ঞানচর্চা? তথ্য
সংগ্রহ? নাকি অন্যকিছু?
প্রযুক্তির কল্যাণে ফেসবুক আজ সর্ববৃহত সামাজিক নেটওয়ার্ক । এ
নেটওয়ার্ক এখন এতটাই জনপ্রিয় যে, যাবতীয় সামাজিক যোগাযোগ ছাড়াও অনলাইন
মার্কেটিং এবং বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এটিকেই বেছে নেয়া হয় ।
সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক আজ প্রতিষ্ঠিত।
কিন্তু ফেসবুকের একদিকে যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি রয়েছে মন্দ দিকও ।
![ja](https://hafizjms.files.wordpress.com/2017/05/ja.jpg?w=700)
আবিষ্কার নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা পাত্রের জন্য নয়। প্রতিটি আবিষ্কার
করা হয় মানব কল্যাণের জন্য । হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় পড়া কালিন সময়ে মার্ক
জাকারবার্গ ২০০৩ সালের ফেইসবুকের পূর্বসূরী সাইট ফেইসম্যাপ তৈরী করেন।
ফেইসম্যাপ সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে মার্ক
জাকারবার্গ তান নতুস সাইট কোড লেখার কাজ শুরু করেন এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি
তারিখে “দ্যা ফেইজবুক ডট কম” প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন ব্যবহার কারীর সংখ্যা ছিল
১০ লাখ । তারপর ২০০৫ সালে ”দ্যা ফেইজবুক ডট কমের” নাম পরিবর্তন করে নাম
রাখা হয় ”ফেইজবুক”। ২০০৬ সালে ফেইজবুক ব্যবহার কারীর সংখ্যা ছিল ৫৫ লাখ।
পরে ফেইজবুকের সাথে মাইক্রোসফট সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তারপর সর্বসাধারণের
জন্য ফেইজবুক উন্মুক্ত করা হয়। ২০০৭ সালে এর ব্যবহার কারীর সংখ্যা দাড়ায় ২
কোটি। ২০০৮ সালের এপ্রিলে ফেইজবুক চ্যাট চালু হয় এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা
দাড়ায় ১০ কোটিতে। তারপর ২০০৯ সালে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাড়ায় ৩৫ কোটি। ২০১০
সালের ডিসেম্বরে পৌছায় ৫৫ কোটিতে। আর বর্মানে ফেইজবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা
শতকোটি পেরিয়ে সহস্র কোটিতে ছুই ছুই করছে।
বর্তমানে পৃথিবীর ৪২.২ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে
প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। ধারণা করা হয়েছিল ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ পৃথিবীর প্রায়
অর্ধেক লোক ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আসবে | বিটিআরসির (BTRC) হিসাব
অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১৫ সালের আগস্টে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায়
চার কোটি আট লাখ। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। প্রতি ১২
সেকেন্ডে একটি করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে যেটা বাংলাদেশের
জন্মহারের চেয়েও বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা
প্রায় সাত কোটি ৷ আর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটিরও বেশি ৷ সাত
কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ছয় কোটিই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন মোবাইল
ফোনে ৷ এই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় তিন কোটি সামাজিক যোগাযোগের
মাধ্যম হিসবে ফেসবুক ব্যবহার করে ৷
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুকই বেশি জনপ্রিয় ৷
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ বয়সে তরুণ ৷ তারা প্রধানত এটাকে
পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলেও এর বাইরে এর নেতিবাচক
ব্যবহারও কম হয় না ৷
![b](https://hafizjms.files.wordpress.com/2017/05/b.jpg?w=492&h=277)
তরুণদের কাছে নিজেদের ভাবনা-চিন্তা তুলে ধরার জন্য এখন সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যম একটি সহজ প্ল্যাটফর্ম ৷ প্রতিদিন তারা কোন ইস্যুকে
প্রধান্য দিচ্ছে তা-ও বোঝা যায় এই মাধ্যম থেকে ৷ তাদের কোনো মন্তব্য বা
প্রচারণা ভাইরাল হয়, কোনো ভিডিও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে ৷
নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামলকান্তির অবমাননার প্রতিবাদ তরুণরাই প্রধম
করেছে ফেসবুকে ৷ তারপর সেই অবমাননার ভিডিও এবং ছবি ভাইরাল হলে সক্রিয় হয়
মেইন স্ট্রিম মিডিয়া ৷ অ্যাকশনে যায় রাষ্ট্র, সরকার ৷
সিলেটে শিশু রাজন হত্যার বিচারও সম্ভব হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের
তরুণ অ্যাক্টিভিস্টদের কারণে ৷ আর শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কথা তো সবারই
জানা ৷ ফেসবুক ব্যবহারকারী তরুণরাই এই আন্দোলন গড়ে তুলোছিলেন সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে ৷এখন বাংলাদেশে ফেইজবুকে লাইভ ভিডিওর সুযোগ
দেয়ায় কেউ কেউ ফেইজবুকে লাইভ করেও হয়ে উঠছেন সেলিব্রেটি ৷ ফেইজবুকে কার কত
ফলোয়ার তা নিয়েও আছে প্রতিযোগিতা ৷ এছাড়াও ফেইজবুকের ভালো কিছু দিক রয়েছে ।
যেমন-
দ্রুত সময়ে তাতক্ষণিক যোগাযোগ । সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।পুরনো
বন্ধু / বান্ধবী খুজে পাওয়ার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম । নতুন বন্ধু / বান্ধবী
তৈরী করার উতকৃষ্ঠ পন্থা । অনলাইন মার্কেটিং এর বিশেষ মাধ্যম । যেকোন বিষয়
শেয়ার করার উল্লেখযোগ্য স্থান।পরামর্শ দেয়া নেয়া এবং গ্রুপের মাধ্যমে আলাপ
আলোচনার সুযোগ। একডেমিক বিষয়গুলো বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে জানা এবং
জ্ঞানার্জন । ছবি, ভিডিও এবং নিজের অবস্থান প্রকাশের তাতক্ষণিক মাধ্যম ।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নিয়ে কাজ করে কনটেন্ট ম্যাটার্স ৷ ঢাকার
কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে তরুণরা এখানে কী করেন, কী ধরনের পোস্ট দেন,
কী শেয়ার করেন – এ সব পর্যকেক্ষণ করে ৷ এ সব তথ্য তারা নানা কর্পোরেট
প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে ৷ প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ‘‘আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে,
যারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করেন, বিশেষ করে তরুণরা, তাদের
শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগই ব্যাক্তিগত তথ্য, ছবি বা অনুভূতি শেয়ার করেন ৷ শেয়ার
করে তারা তাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটাতে চান, অবস্থার জানান দিতে চান ৷
তবে এটা করতে গিয়ে কেউ কেউ ভাষার ব্যবহার বা ছবি ও কনটেন্ট ব্যবহারে
অসতর্কতার পরিচয় দেন, অথবা অসততা করেন ৷
আরো জানায়, ‘‘তবে নতুন একটি প্রবণতা গড়ে উঠছে ৷ আর তা হলো, ফেসবুক
ব্লগিং৷ রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং সামাজিক বিষয় নিয়ে আগে তরুণরা যা
ব্লগে লিখতেন, তা এখন ফেসবুক স্ট্যাটাসেই লিখেন ৷ সেখানে মন্তব্য আসে ৷
পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক হয়
বাংলাদেশে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে ৷ এ
ধরনের সাইবার অপরাধের এখনও প্রধান শিকার নারী ৷ তবে জঙ্গিরাও এই মাধ্যম
ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ ও হুমকি দিচ্ছে ৷ এই মাধ্যম ব্যবহার করছে
প্রতারকরাও ৷
![d](https://hafizjms.files.wordpress.com/2017/05/d.jpg?w=481&h=271)
জঙ্গিরা এখন অনলাইন বা ইন্টারনেটকে তাদের যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম
বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ৷ পারস্পারিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে
উগ্র ধর্মীয় মতবাদও প্রচার করছে অনলাইনে ৷ পুলিশের কথায়, এ সব পেজের
অ্যাডমিন বা ব্যবহারকারীরা বেশিরভাগই বিদেশে অবস্থান করে ৷ ফলে তাদের
শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না ৷
ফেসবুকের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়েবসাইটেও চলছে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের
প্রচারণা৷ এর আগেও বেশ কিছু ফেসবুক পেজ, আইডি, ব্লগ আর ওয়েবসাইট বন্ধ করা
হয়েছে ৷ কিন্তু একটি বন্ধ করা হলে জঙ্গিরা নতুন নামে আরেকটি পেজ বা আইডি
খুলে একই কাজ শুরু করছে ৷ পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা নাকি
অনলাইনের মাধ্যমে সদস্যও সংগ্রহও করছে ৷
![e](https://hafizjms.files.wordpress.com/2017/05/e.jpg?w=700)
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে ৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল,
ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয় ৷ সমস্যাটা সেখানেই ৷ যেসব
ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা
অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে ৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য
ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে ৷ কারণ আপনার যে
পরিচয় চুরি হয়ে গেছে।
বাংলাদেশে ব্লগার হত্যাসহ লেখক-প্রকাশক হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে
ফেসবুকের মাধ্যমে ৷ আর হত্যার পর দায় স্বীকারের সময়ও ব্যবহার করা হয়েছে
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ৷ গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে
২০ জনকে হত্যার কথা জঙ্গিরা সামাজিক যোগাযোগোর মাধ্যমেই প্রকাশ করে ৷
এছাড়া হত্যাকে সমর্থন করে পরবর্তীতে তিনজন জঙ্গির ভিডিও বার্তাও ছড়ানো হয়
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ৷ পুলিশ জানায়, নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
চালানোর প্রথম উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের
মাধ্যমের অ্যাপসকে ৷
সাইবার হয়রানি থেকে সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে একটি ‘সাইবার হেল্প ডেস্ক’ রয়েছে ৷ এই হেল্প
ডেস্কে গত দু’বছরে ১৭ হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে ৷ অভিযোগকারীদের ৭০
ভাগই নারী৷ আরও সুর্দিষ্ট করে বললে, নারীদের অভিযোগের ৬০ ভাগেরও বেশি
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুককে কেন্দ্র করে ৷
![f](https://hafizjms.files.wordpress.com/2017/05/f.jpg?w=700)
এরমধ্যে ১০ ভাগ অভিযোগ সত্যিই ভয়াবহ ৷ এর মধ্যে রয়েছে অন্যের ছবিতে ছবি
জুড়ে দেওয়া (সুপার ইম্পোজ) এবং পর্নোগ্রাফি ৷ ইউটিউব ও বিভিন্ন সাইটে এ সব
পর্নোগ্রাফি ও ছবি ‘আপলোড’ করার হারও বেড়ে চলেছে ৷ এছাড়াও ফেসবুকের আরো
কিছু খারাপ দিক রয়েছে । যেমন-
ফেসবুকের মূল উদ্দেশ্য ব্যহত করে ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার সুযোগ।
অপরিচিত লোকের সাথে বন্ধুত্ব করে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা প্রচুর। অপরিচিত
বন্ধু বান্ধব তৈরী করে তাদের সাথে নিজের সব বিষয় শেয়ার করা। ফেসবুকের নেশায়
পড়ায় অমনোযোগী অপার সম্ভাবনা । রাত দিন বিভিন্ন স্ট্যাটাস শেয়ারের মাধ্যমে
নিজের ব্যক্তিত্বকে তুচ্ছ করার সুযোগ। ফেসবুককে জীবনের অন্যতম অংশ ভেবে
নিজের পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা । । যখন তখন নিজের
প্রয়োজনীয় কাজকে তুচ্ছ করে ফেসবুকেই নিমগ্ন থাকা। পরিবার পরিজনের সাথে
একসাথ হলেও ফেসবুকের নোটিফিকেশন, লাইক দেয়া, কমেন্টস করার মাধ্যমে কাছাকাছি
থেকেও দূরবর্তী স্থানের মানুষ হতে হয় । । ফেসবুকের পরিচিত / অপরিচিত
সদস্যরা মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ফলে সামাজিক
মূল্যবোধের অবক্ষয় সৃষ্টি হয় । । ভুয়া আইডি তৈরী করে ফেসবুক ব্যবহারের
মাধ্যমে অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়ার আশঙ্কা । । সর্বোপরি সাফল্যের পথে এগিয়ে
যাওয়ার জন্য কাঙ্খিত পথে সে সময় দেয়া প্রয়োজন, শুধুমাত্র ফেসবুকেই সে সময়
দিয়ে ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হওয়ার যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে ।
বর্তমানে বাবা মা ভাই বোন সবাই একসাথ হলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়
ভাই স্ট্যটাসে কমেন্ট করা নিয়ে ব্যস্ত, বোন ছবি আপলোড নিয়ে ব্যস্ত আবার
বাবা কিংবা মা ফোনে কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত । একসাথে দেখেও সবাই দূরে দূরে ।
এমন অবস্থা শুধু পরিবারেই নয়, বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময়ও
পরিলক্ষিত হয়। এমন অবস্থা তৈরীরর পেছনে ফেসবুকের যথেষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে ।
ফেসবুক একদিকে যেমন দিয়েছে বেগ, তেমনি কেড়ে নিয়েছে আবেগ । ফেসবুকের
কল্যাণে আমরা আজ আমাদের পরিবার পরিজন থেকেও দূরে সরে গেছি । পরিবারের
লোকজন আমাদের কাছ থেকে কাঙ্খিত সময় পায় না । ফলে সামাজিক অবক্ষয়, পাবারিক
ভাঙ্গন এসব প্রকট হয়ে পড়ে । পাশাপাশি ফেসবুকের নেশায় মত্ত হয়ে আজকের তরুণ
সমাজ পড়াশোনা থেকেও দূরে সরে যায়, ফলে তাদের মেধাটাও ভিন্নখাতে প্রবাহিত
হচ্ছে । এতে কাঙ্খিত মেধাবী ঝড়ে পড়ছে এবং ফেসবুকের নেশা ছাড়তে না পেরে
আমাদের তরুণ সমাজ পর্যায়ক্রমে আরো অবক্ষয়ের দিকেও ধাবিত হচ্ছে । তাই
প্রযুক্তির কল্যাণে ফেসবুকের কাঙ্খিত ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন ।
ভালো কাজে ফেসবুক ব্যবহার যেন আমাদের সবসময়ের প্রত্যাশা হয় । ফেসবুককে
নেশার বস্তু না বানিয়ে আমরা স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা
যেন এটাকে আমাদের কল্যাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি। সামাজিক যোগাযোগের
সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে তার মূল্যায়ন যেন করা হয়, আমরা যেন এ
ফেসবুককে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ না বানিয়ে সুষ্ঠু সুন্দর সমাজ নির্মাণের
মূল চালিকা শক্তি হিসাবে ব্যবহার করতে পারি এমন প্রত্যাশাই থাকুক সব সময়ের
জন্য ।
একটি গ্লাসে যেমন মদ খাওয়া যায়, তেমনি খাওয়া যায় বিশুদ্ধ পানি । পানি
কিংবা মদের জন্য যেমন কোনভাবেই গ্লাসকে দায়ী করা যায়না, তেমনি মন্দ কাজে
ব্যবহারের জন্য দায়ী করা যাবেনা ফেসবুককে। সুতরাং সচেতন হতে হবে
আমাদের তরুণ সমাজকে ।
s@copy